দেশের বড় বড় মোকামে আমের প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। অতিরিক্ত গরমে অধিকাংশ জাতের আম পেকে গেছে একসঙ্গে। লোকসান কমাতে গত বছরের তুলনায় কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমেই ছেড়ে দিচ্ছেন। ঈদের লম্বা ছুটিতে জেলার বাইরে আমের চাহিদাও ছিল কম। ছুটি শেষেও সেই ধাক্কা সামাল দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ ওইসব অঞ্চলে এখন আমের ভরা মৌসুম। চাষি পর্যায়ে এবার আমের দাম গত বছরের তুলনায় বেশ কম। যদিও রাজধানী ঢাকার বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে গড়ে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ১০০ টাকা। তবে উৎপাদন এলাকাগুলোতে দাম ২০ থেকে ৩০ টাকার ওপরে উঠছে না। কোনো কোনো দিন মোকামে দাম ২০ টাকার নিচেও নেমে যাচ্ছে, তখন লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
নওগাঁর বদলগাছি এলাকার চাষি ইয়াকুব মিয়া বলেন, ‘এ এলাকার বিখ্যাত ফজলি আমের মণ যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পাইকারি, যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৬০০ টাকা কম।’তিনি বলেন, ‘এবার ঈদের কারণে আমাদের সর্বনাশ হয়েছে। লম্বা ছুটিতে শহরের মানুষ গ্রামে থেকেছে। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর এলাকায় আম পাঠানো যায়নি, চাহিদাও ছিল না। তখন আম পেকেছে, নষ্ট হওয়ার ভয়ে কম দামে বিক্রি করেছি।’ আরও কয়েকজন আম চাষি জানান, আম পেকে গেলে দ্রুত পচন ধরে। ফলে কম দামেই আম বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। একদিকে ছুটিতে বেচাবিক্রি ছিল কম, তার মধ্যে প্রচণ্ড গরমে আম দ্রুত পেকেছে ওই সময়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকার আম চাষি ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমের ঠিক ভরা মৌসুমে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। তাই সব আম দ্রুত একসঙ্গে পেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে চাহিদাও কম ছুটির কারণে। যে কারণে বড় লোকসান এড়াতে কম দামেই আম বিক্রি করে দিয়েছি।’
দেশে এখন আমের একটি বড় বাজার তৈরি হয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। এই ছুটির মধ্যে অনলাইনের ক্রেতারাও আমের বাজারে যায়নি। তাদের থেকেও অর্ডার মিলেছে কম। আম কিনুন ডট কম নামে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কর্ণধার শ্যামল বিশ্বাস বলেন, ‘এ সময় কুরিয়ারও বন্ধ ছিল। আমাদেরও অর্ডার ছিল না। যে কারণে আমরা বাগান ও মোকামে বড় কোনো অর্ডার দিতে পারিনি। ভরা মৌসুমে এ ছুটির কারণে আমরাও ক্ষতির মুখে পড়েছি।’আবার মোকামগুলোতে মৌসুমি আম বিক্রেতারাও কম আম কিনতে আসেন ঈদের কারণে। সার্বিকভাবে এ বাজারগুলো ছিল খুব ঢিলেঢালা।
এবার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গুটি, গোপালভোগ, রানিপছন্দ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর বা ক্ষিরশাপাতি এবং ব্যানানা ম্যাঙ্গো ও ল্যাংড়া আম পাড়া শুরু হয়েছে এ পর্যন্ত। ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতী সংগ্রহ করা যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই পাকা সাপেক্ষ পাড়া যাবে। তবে চাষিরা জানান, আগে প্রায় সপ্তাহ ব্যবধানে গোপালভোগ, লক্ষ্মণভোগ, হিমসাগর এ ধরনের আম পাকলেও এবার প্রায় একসঙ্গে এগুলো পেকেছে। এছাড়া গরমের কারণে আম্রপালি, ফজলি আম আগেভাগে পাকা শুরু করেছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এবার রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদন আড়াই লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। অনুকূল পরিবেশ থাকায় আম উৎপাদন বেশি হয়েছে এবার। এ কারণে অন্যবারের তুলনায় আমের দাম কিছুটা কম। তবে ছুটি শেষে দাম বাড়বে বলে আশা করছি।’
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন